বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিংস্টক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন এবং আধুনিক রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্মী পর্যায়ে প্রথমবারের মতো বৈদেশিক প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। “বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিংস্টক ব্যবস্থাপনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ উন্নয়ন” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় লোকোমোটিভ রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীরা দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে অনুষ্ঠিতব্য বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে আজ ঢাকাত্যাগ করছেন।

দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের অনুদানে পরিচালিত এই দক্ষতা উন্নয়ন উদ্যোগ বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাসে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চলমান প্রকল্পের অংশ হিসেবে আগামী ০৯ ডিসেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত কোরিয়া রেল ওয়ার্কসপে (Korea Rail Workshop) বিশেষায়িত প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে।
প্রশিক্ষণার্থী দল
লোকোমোটিভ কারখানা ও লোকোসেডের দশজন দক্ষ কর্মী এবং সমন্বয়ক হিসেবে দুইজন কর্মকর্তা প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন। তারা হলেন—
মোঃ রেজওয়ান উল-ইসলাম, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো), চট্টগ্রাম
নিরঞ্জন সিকদার, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল)
শহিদুল ইসলাম, ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ইলেকট্রিক্যাল)
মোঃ মোজাম্মেল হক, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি (গ্রেড-১)
মোঃ মামুনুর রশিদ, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি (গ্রেড-১)
মোঃ শামীম হোসেন, ইলেকট্রিশিয়ান (গ্রেড-১)
শাহিনুর আলম, ইলেকট্রিশিয়ান (গ্রেড-১)
হারুন অর রশিদ, ফিটার (গ্রেড-১)
মোঃ সৈয়দ ওয়াকত হোসেন, ফিটার (গ্রেড-১)
মোঃ সালাউদ্দিন, ফিটার (গ্রেড-১)
রাসেল আলম, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ)
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মনোনীত প্রতিনিধি।
প্রকল্পের পূর্ববর্তী কার্যক্রম
এ প্রকল্পের আওতায় এর আগে পাহাড়তলী ডিজেল ওয়ার্কসপে দুই দফায় ৬০ জন কর্মীকে কোরিয়ান বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণ শেষে কোরিয়ান বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী মানোন্নত ও মেধা-ভিত্তিক নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবার বিদেশ প্রশিক্ষণের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ ফাহিমুল ইসলাম প্রশিক্ষণার্থীদের শুভকামনা জানিয়ে বলেন—
“এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুধু দক্ষতা উন্নয়নই নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি টেকসই ও আধুনিক রেল অপারেশন গড়ে তোলার ভিত্তি রচনা করবে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকে অর্জিত জ্ঞান কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগের মাধ্যমে রেলওয়ের সেবা মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবেন।”
তিনি এ উদ্যোগ গ্রহণে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক এবং প্রকল্প পরিচালকের গতিশীল ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রেল সংশ্লিষ্টদের মতে, কর্মী পর্যায়ে বিদেশ প্রশিক্ষণ শুধু দক্ষতা বৃদ্ধি করবে না, বরং মাঠপর্যায়ের কর্মীদের কাজে আন্তরিকতা, উদ্দীপনা ও পেশাদারিত্ব বাড়িয়ে দেবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনিরের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শমূলক বক্তব্য
বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির এ গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন—
“দীর্ঘদিন ধরে আমরা কর্মী পর্যায়ে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ চালুর দাবি জানিয়ে আসছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পূর্ববর্তী সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত নেয়নি। বর্তমান রেলপথ সচিব এবং রেলওয়ের মহাপরিচালক যে সাহসিকতা, দূরদৃষ্টি ও বাস্তবভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে রেল খাতে নতুন যুগের সূচনা করেছেন—তার জন্য আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। দেরিতে হলেও রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে আজ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রমাণ করেছে যে তারা দক্ষতা উন্নয়ন ও মানবসম্পদ বিনিয়োগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন—
“লোকোমোটিভ রক্ষণাবেক্ষণ এমন একটি ক্ষেত্র যা উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ছাড়া আধুনিকায়ন সম্ভব নয়। এই প্রশিক্ষণ শুধু দক্ষতা বাড়াবে না; বরং ভবিষ্যতে নিরাপদ চলাচল, কম দুর্ঘটনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ের হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা আশা করি, এই উদ্যোগ ধারাবাহিকভাবে চালু থাকবে এবং আরও বৃহত্তর পরিসরে কর্মীদের বিদেশ প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হবে।”
রোলিংস্টক ব্যবস্থাপনা ও লোকোমোটিভ রক্ষণাবেক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করার ক্ষেত্রে এ উদ্যোগ একটি মাইলফলক। বাংলাদেশ রেলওয়ে যেভাবে কর্মী পর্যায়ে জ্ঞান ও দক্ষতার বিস্তার ঘটাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে, তা রেলখাতের সামগ্রিক উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে—এমন বিশ্বাস সংশ্লিষ্ট সকলের।









